আমরা সবাই জানি গুগলের পেঙ্গুইন আপডেটের পর কন্টেন্ট রাইটিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের এখন রাইটারের খুব স্বল্পতা। এর কারণ হলো আর্টিকেল লেখার সঠিক নিয়মগুলো না জানা। আমাদের রাইটার আছে অনেক, কিন্তু আর্টিকেল রাইটারের অভাব প্রচুর । যারা আর্টিকেল লিখে ক্যারিয়ার গড়তে চান, কিন্তু পারছেন না সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে, তাদের উদ্দেশ্যেই কিছু কথা আমি এখানে তুলে ধরছি, যা আমি জেনেছি বাংলাদেশের অন্যতম এসইও এক্সপার্ট ইকরাম ভাই এর কাছ থেকে, ক্রিয়েটিভ আইটি তে গিয়ে। আশা করছি, কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন পাঠকবৃন্দ। তবে একটি কথা এখানে না বললেই নয়, তা হল, পত্রিকায় আর্টিকেল লিখা আর এসইও’র জন্যে আর্টিকেল লেখা সম্পুর্ণ আলাদা ব্যাপার, তাই লেখার শুরুতেই মাথায় এই চিন্তাটি ঢুকিয়ে নিতে হবে যে আপনি আর্টিকেল লিখছেন কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের এসইও করার জন্যে।
আর্টিকেল লিখার সময় আরো যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো:
♦ যদি আপনি নিজের জন্য আর্টিকেল লিখেন, তাহলে প্রথমেই ঠিক করে নিন আপনি আর্টিকেলটি কী উদ্দেশ্যে লিখছেন? যদি শিক্ষণীয় হয়ে থাকে, তাহলে আবশ্যই যে বিষয়টি পাঠকদের জানাতে চাইছেন, তা সম্পর্কে ভালভাবে নিজেকে সমৃদ্ধ করে নিন। ধরুন আপনি এসইও নিয়ে লিখতে চাইছেন, তাহলে আগে আপনাকে এসইও’র গভীরে গিয়ে এই বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে হবে, তা নাহলে আপনি অন্যদের শিখাবেন কেমন করে?
♦ আর যদি আপনি নিজের বা অন্যের কোন পণ্যের প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে লিখতে চান, তাহলে সেই পণ্যটির ব্যাপারে সঠিক তথ্য জেনে নিয়েই তা আপনার লেখায় প্রকাশ করবেন। একটি ব্যাপার আবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, তা হলো, শুধু মাত্র পজিটিভ তথ্য দিলেই চলবে না, পণ্যটিকে গ্রহণ যোগ্য করার জন্য কিছু নেগেটিভ তথ্য দিয়ে বিশ্বস্ততা সৃষ্টি করে পাঠকদের আকৃষ্ট করতে হবে। এমনভাবে লিখবেন যেন পণ্যটির নেগেটিভ দিক গুলো ক্লায়েন্টের কাছে তুচ্ছ মনে হয়। ক্লায়েন্ট যেন আপনার পণ্যটি কেনার জন্য উদ্গ্রিব হয়ে উঠে।
♦ লেখা শুরু করার আগেই ঠিক করে নিন, আপনি কাদের উদ্দেশ্যে লিখছেন? সেই পাঠকরা আপনার টপিক্সের ব্যাপারে কতটুকু আগ্রহী হবে? ধরুন, আপনি শিশু-কিশোরদের জন্যে কিছু লিখবেন, তাহলে তার ভাষা, প্রকাশভংগিও তাদের উপযোগী হওয়া উচিত। তা নাহলে শিশু-কিশোররা আপনার লেখার প্রতি আগ্রহী হবে না। যাদের উদ্দেশ্যেই লিখবেন, তারা যেন আপনার লেখা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে না পারে। অর্থাৎ টার্গেটেড ইউজারদের রুচি, চাহিদা বিচার বিশ্লেষন করে তারপরই আপনার আর্টিকেল্টি লেখা শুরু করবেন।
♦ যে বিষয়টি নিয়ে লিখবেন, তা নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করুন অনলাইনে বা অফলাইনে। অন্যরা তা নিয়ে কী লিখেছে, কী কী তথ্য দিয়েছে, তা দেখুন আগে। তারপর চেষ্টা করুন নতুন তথ্য দিতে, যা এর আগে কেও দেয়নি। যদি কেও দিয়েও থাকে, তবে তা কথার মারপ্যাচে ঘুরিয়ে লিখুন, যাতে করে পাঠকরা ভাবে যে আপনিই নতুন করে কোন তথ্য তাদের কে দিলেন।
♦ ভুল করেও কখনো কারো লেখা কোথাও কপি পেস্ট করবেন না, এতে আপনার নিজের পায়ে কুড়াল মারার মত আবস্থা হবে। কপিরাইট ঝামেলায় তো অবশ্যই পড়বেন, এমনকি গুগল আপনাকে ব্ল্যাক লিস্টে ফেলে দিতে পারে, আর একবার যদি ব্ল্যাক লিস্টে ফেলে দেয়,তাহলে সব শেষ। আপনার আর্টিকেল রাইটার হওয়ার স্বপ্ন মাঠে মারা যাবে তখনই। সুতরাং সাধু সাবধান, ঐ কাজের ধারে কাছেও যাবেন না। তবে হ্যা, যদি কারো লেখার কোন অংশ দিতেই চান, যা আপনার খুব পছন্দ হয়েছে, তাহলে অবশ্যই কোটেশন মার্ক করে দেবেন, তাহলে আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
♦ আপনার লেখার মূল উদ্দ্যেশ্যগুলো পয়েন্ট আকারে বা প্যারা করে অথবা সাব টাইটেল ব্যাবহার করে লিখবেন, যাতে পাঠকের চোখে সম্পূর্ণ বিষয়টা নীট এন্ড ক্লিন থাকে, হিজিবিজি মনে না হয়। লেখাটিকে আকর্ষনীয় করার জন্য বিষয়ের সাথে মিল আছে, এমন ইমেজও ব্যবহার করতে পারেন। যদি আর্টিকেলটি হয় এসইও’র উপর, তাতে যেন এসইও রিলেটেড ছবিই থাকে, তা যেন কোন সুন্দরী মেয়ের চোখে আইলাইনার দেয়ার ছবি না হয়।
♦ যা-ই লিখেন, তা যেন উন্নত মানের লেখা হয়। কারণ একবার পাঠক-মনে আপনার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হলে, তা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হবে আপনার জন্য। তাই প্রথম থেকেই খেয়াল রাখবেন, আপনার লেখা যেন খুব ভালো মানের হয়, তথ্যবহুল হয়, এবং পাঠককে ধরে রাখার ক্ষমতা সম্পন্ন হয়। ইকরাম ভাইয়ের লেখা এতো বেশী লোকজন পড়ে অকারণে নয়, পাঠক জানে যে তাঁর লেখা মানেই তা থেকে অনেক কিছু জানতে পারা।
♦ আর্টিকেল বাংলা বা ইংরেজি যে ভাষাতেই লিখুন না কেন, বানান যেন ভুল না হয় আর একই শব্দের পুনরাবৃত্তি যেন বারবার না হয়, এটি পাঠক চোখে বিরক্তির উদ্রেক করে।
গুগল-ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লেখার জন্য কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, সেগুলো হল
• লেখকের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা
• এসইও সম্পর্কে লেখকের জ্ঞান
• লেখকের গ্রামারের ব্যাপারে দক্ষতা
• সঠিক বানান ব্যবহার করা
• আর্টিকেলের টপিকস নিয়ে লেখকের অনুসন্ধান মূলক গবেষণা
• ইউনিক কন্টেন্ট বা আর্টিকেল অর্থাৎ আপনার একান্তই নিজস্ব বা মৌলিক লেখা
• ভালো মানের লেখা যা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম
♦ আর্টিকেল লেখার শুরুতে কুশলাদিমূলক কথা বলে সময় নষ্ট না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কারণ পাঠক প্রথম অংশটুকু পড়েই কিন্তু আপনার লেখার গভীরে যাবে। সুতরাং শুরুটা এমনভাবে করবেন, যেন পাঠক কিছুতেই আপনার লেখা স্কিপ করতে না পারে। মনে রাখবেন, আপনি কিন্তু আপনজন কে চিঠি লিখতে বসেননি বা কারো সাথে আলাপ করে সময় কাটানোও আপনার উদ্দেশ্য নয়। আপনার উদ্দেশ্য কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে লেখার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
♦ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে আঘাত করা বা কোন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে, এমন লেখা পরিহার করুন। এটা করলে আপনার পাঠকদের মধ্য বিভেদ সৃষ্টি হবে, বা তা থেকে কোন সংঘাতও সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে।
♦ আপনার লেখাটিকে তিনভাগে ভাগ করে লিখবেন,
সূচনা বা ভূমিকা,যেখানে আপনার লেখাটির আসল উদ্দেশ্য থাকবে, যা দেখে পাঠক আকৃষ্ট হবে।
মূল অংশ বা বডি, যেখানে থাকবে আপনার আর্টিকেলের বিশদ বর্ণনা।
সবশেষে উপসংহার, যেখানে আপনার লেখার সার সংক্ষেপ বা সামারি থাকবে অল্প তবে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায়।
♦লিখবেন দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে, পাঠকের কাছে কখনোই নিজেকে হেয় প্রতিপন্ন করবেন না, অতি বিনয় দেখাতে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন না। এতে করে আপনার সম্পর্কে পাঠকমনে একটা হাস্যকর বা করুনার ভাব জন্মাবে, যা আপনার ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর।
আমি চেষ্টা করেছি, যে বিষয়গুলো জেনে আমি উপকৃত হয়েছি, তা আপনাদের জানাতে। তবে জানারতো কোন শেষ নেই, উন্নত মানের আর্টিকেল লেখার জন্য আরো অনেক লেখা পাবেন নেট এ। সেগুলো নিয়মিত পড়বেন, বিশেষ একটি সাইটের নাম না বললেই নয়, সেটি হলো http://www.copyblogger.com/ ।
আমার লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, সামান্যতম উপকারে আসে , তাহলেই সার্থক হবে আমার প্রচেষ্টা।
No comments:
Write comments